/ History
ঐতিহাসিক আরমানিটোলা মাঠের পূর্বে পার্শ্বে ২নং হার্নী স্ট্রিটস্হ ভবনটি এবং ১নং শরৎচন্দ্র চক্রবর্তী রোড (এসিরায় রোড) এর পূর্ব পাশের ভবনটিতে ঢাকায় নবাবদের ডাক্তার বাস করতেন।  (বর্তমানে ঐ ভবনটি ‘সাহেরা ভিলা’ নামে পরিচিত)।  কলিকাতার প্রখ্যাত গায়িকা উৎপলা সেনের পিতামহ ছিলেন নবাবদের ডাক্তার।  সাহেরা ভিলার পশ্চিম পার্শ্বের ১নং এসিরায় রোডস্হ ভবনটি নবাবদের উকিল বাবু আনন্দ চন্দ্র রায় এর বাসস্হান ছিল।  আনন্দ রায় ঢাকার একজন প্রখ্যাত উকিল এবং ঢাকা মিউনিসিপ্যালটির চেয়ারম্যান ছিলেন।  উপরোক্ত ভবন তিনটি আজও বৃটিশ আমলের সাক্ষ্যবহন করছে।  নবাব পরিবার ডাক্তার এবং উকিলের ব্যসস্হান হিসেবে উক্ত ভবনগুলো দান করেছিলেন।
 বর্তমান ঢাকার ইডেন বিশ্ববিদ্যালয়টি পূর্বে ইডেন স্কুল নামে পরিচিতি ছিল।  ১৯৩২ সালে ইডেন স্কুলের প্রিন্সিপাল পদে মিস আলফান্‌সো যোগদান করেন।  তাঁর যোগদানের বছরই অধিক সংখ্যক ছাত্রী বার্ষিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়।  মিস আলফান্‌সো খুবই কড়া  এবং ডাকসাইটে মহিলা ছিলেন।  তিনি ফেল করা ছাত্রীদের প্রমোশনের বিপক্ষে ছিলেন।  তিনি ঘোষণা দিলেন প্রয়োজনে অল্প সংখ্যক ছাত্রী নিয়ে স্কুল চালাবেন।  ঐ সময় ইডেন স্কুলে মিস বনশ্রী দেবী নামে একজন প্রতিভাময়ী শিক্ষিকা ছিলেন।  তিনি মনে মনে স্হির করলেন, ফেল করা ছাত্রীদের নিয়ে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করবেন।  আরমানিটোলার আনন্দ বাবুর সাথে মিস বনশ্রী দেবীর পারিবারিক সূত্রে পরিচয় ছিল।  তাই তিনি আনন্দ বাবুকে মেয়েদের জন্য একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিলেন।  বনশ্রী দেবীর এহেন প্রস্তাবে আনন্দ রায় খুবই খুশী হলেন।  কারণ ঐ এলাকায় মেয়েদের জন্য কোনো স্কুল না থাকায় তারা লেখাপড়ায় খুবই পেছনে পড়েছিল।  তাই তারও মনে মেয়েদের জন্য অত্র এলাকায় একটি স্কুল করার প্রবল ইচ্ছা ছিল।  বনশ্রী দেবীর সাথে একমত হয়ে আনন্দ বাবু আরমানিটোলা মাঠের পূর্ব দিকে অবস্হিত ২নং হার্নী স্ট্রিটস্হ ভবনটিতে হার্নী সাহেবের অনুমতিক্রমে ১৯৩৩ সালে তার মাতার নামানুসারে “আনন্দময়ী বালিকা বিদ্যালয়টি” প্রতিষ্ঠা করেন এবং বনশ্রী দেবীকেই উক্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিক হিসেবে দায়িত্বভার অর্পণ করেন।  ১৯৩৩ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ দেশ বিভাগের পূর্ব পর্যন্ত বিদ্যালয়টি উক্ত ভবনেই চালু ছিল।  ১৯৪৮ সালে অবাঙ্গালীরা উক্ত স্কুলে একটি উর্দু স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।  এমতাবস্হায় উক্ত স্হানে আনন্দময়ী বালিকা বিদ্যালয়ের ক্লাশ পরিচালনা করা সম্ভব না হওয়ায় আনন্দ রায়ের যোগ্য উত্তরসূরীরা ১নং এসি রায় রোডস্হ তাদের নিজস্ব বাসভবনের নিচতলায় বিদ্যালয়টি স্হানান্তর করেন।
মিস বনশ্রী দেবীর পরে ভারতী নাগ বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।  জগন্নাথ মহাবিদ্যালয়ের তৎকালীন অধ্যক্ষ শ্রী সত্যেন ভদ্রের মেয়ে এবং জগন্নাথ মহাবিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রধান স্বনামধন্য শ্রী শৈলের ভদ্রের বোন অরুনা ভদ্র ৩য় প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন।
 ১৯৫০ সালে ১নং এসি রায় রোডস্হ ভবনটি আঞ্জুমাননেসা খাতুন (পতি খান বাহাদুর মোহাম্মদ শামসুদ্দোহা) আনন্দ রায়ের বংশধরের সাথে তাদের কলিকাতার বাড়িটি রেওয়াজ বদল করেন।  তারপর আনন্দ রায়ের বংশধররা ভারতে চলে যান।   বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভবনটির নতুন মালিকের সাথে মাসিক ভাড়ায় বিদ্যালয়টি পরিচালনা করতে থাকেন।  ১৯৫৪ সালে মিসেস আজিজুননেসা ৪র্থ প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে অত্র বিদ্যালয়ে যোগদান করেন।  এক বছর পর ১৯৫৫ সালে মিসেস মমতাজ বেগম ৫ম প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন এবং তিনি উক্ত পদে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত বহাল ছিলেন।  দেশ বিভাগের পর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক সমস্যার ফলে ছাত্রী সংখ্যা খুবই  হ্রাস পায়।
 এমনি এক পরিস্হিতিতে মিসেস সাদেকা সামাদ ৬ষ্ঠ প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে ১৯৫৯ সালে আনন্দময়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন।  তার সুযোগ্য পরিচালনায়, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি এবং শিক্ষক/শিক্ষিকাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিদ্যালয়ের ছাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধি  পায় এবং বিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক সংকট ও কেটে যায়।   পাশাপাশি বিদ্যালয়ে নিয়ম শৃঙখলা এবং লেখাপড়ার পরিবেশ সুন্দর হওয়ার ফলে ছাত্রীদের পরীক্ষার ফলাফল ও ভাল হয়।  যারা অপেক্ষাকৃত কম মেধাবী তাদের বিশেষ কোচিং এর মাধ্যমে মেধা উন্নীত করা হয়।  মিসেস সাদেকা সামাদের আমলেই তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর জনাব আজম খান আনন্দময়ী বালিকা বিদ্যালয়ে আগমন করেন।  তিনি বিদ্যালয়ে কিছু অর্থও দান করেছিলেন।  মিসেস সাদেকা সামাদ এবং বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সুযোগ্য নেতৃত্ব এবং ব্যবস্হাপনায় ১৯৬৫ সালে ১৭/১৮ কাজিমুদ্দিনি সিদ্দিকী লেনস্হ ৫ কামরা বিশিষ্ট পুরাতন একতলা ভবন, গাছ-গাছালী ও একটি পুকুরসহ ৫৩ শতাংশ জায়গা সরকারের কাছ থেকে গ্রহণ করা হয়।  তখন হতেই ২য়, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির ক্লাশ নতুন নিজস্ব ভবনে চালু হয়।
 পুরাতন ভবনটি আঞ্জুমান নেসা খাতুনের নিকট হতে আবদুল হাবিবুল্লাহ ও আবদুল হাফিজ নামে দুই সহোদর  ভাই ক্রয় করেন এবং পূর্বের নির্ধারিত ভাড়াই তারা গ্রহণ করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বিদ্যালয় পরিচালনা করার সুযোগ দিয়ে আসছিলেন।  তখন বিদ্যালয় এক শিফটে চালু ছিল।
 ১৯৭০-৭১ সালে ঢাকা বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় সন্তোষজনক ফলাফলের জন্য মিসেস সাদেকা সামাদ ‘বেস্ট হেড মিস্ট্রেস’ ও ‘তমখায়ে কায়েদে আযম’ উপাধি লাভ করেন।  ভিজিটিং টিচার হিসাবে ‘ফুলব্রাইট’ স্কলারারশীপ নিয়ে তিনি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন।  এই সময় এক শিফটে ৫শ’ থেকে ৬শ’ ছাত্রী পড়াশুনা করার সুযোগ পেত।  স্হানাভাবে অধিক সংখ্যক ছাত্রী ভর্তি করা সম্ভব হতো না।  ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ডেপুটি মেয়র জনাব জাহাঙ্গীর মোঃ আদেল, প্রধান শিক্ষিকা, কমিটির সম্মানিত সদস্য/সদস্যার আন্তরিক প্রচেষ্টায় এবং এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ১৯৮১ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট মরহুম জিয়াউর রহমান আনন্দময়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে আগমন করেন এবং বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য ছয় লক্ষ টাকা মঞ্জুর করেন।  পরবর্তীতে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসান অত্র বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন এবং প্রেসিডেন্ট হোসাইন মুহাম্মদ এরশাদকে বিদ্যালয় পরিদর্শন এবং বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের জন্য বিদ্যালয়ে নিয়ে আসার আশ্বাস প্রদান করেন।  মেয়র মাহমুদুল হাসান অত্র বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন এবং প্রেসিডেন্ট হোসাইন মুহাম্মদ এরশাদকে বিদ্যালয় পরিদর্শন এবং বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের জন্য বিদ্যালয়ে নিয়ে আসার আশ্বাস প্রদান করেন।  মেয়র মাহমুদুল হাসান এবং ডেপুটি  মেয়র জনাব জাহাঙ্গীর মোঃ আদেলের প্রচেষ্টায় সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসাইন মুহাম্মদ এরশাদ ১৭/১৮ কাজিমুদ্দিন সিদ্দিকী লেনস্হা বিদ্যালয়ের নিজস্ব জায়গা পরিদর্শন করেন এবং আরমানিটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জনসভায় আনন্দময়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নিজস্ব জায়গা পরিদর্শন করেন এবং আরমানিটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জনসভায় আনন্দময়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়কে দশ লক্ষ টাকা প্রদানের ঘোষণা দেন।   সাবেক প্রেসিডেন্টদ্বয় কর্তৃক দেয় অর্থের মাধ্যমে ১৭/১৮ কাজিমুদ্দিন সিদ্দিকী লেনস্হ নিজস্ব জায়গায় তিনতলা ফাউন্ডেশনের ১ম তলা (১৭ কক্ষ বিশিষ্ট) ভবনটি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়।  বিদ্যালয় প্রাঙ্গণের পূর্ব পার্শ্বের পিয়ন ও দারোয়ানের জন্য দুই কক্ষ বিশিষ্ট ১ তলা দালানটিও কর্পোরেশন নির্মাণ করে দেন।  ঐ সময় হতেই শিশু থেকে ৫ম শ্রেণির ক্লাস নব নির্মিত ভবনেই শুরু হয়।  মিসেস সাদেকা সামাদ অত্যন্ত দক্ষতা ও সফলতার  সঙ্গে সুদীর্ঘ ৩০ বছর দায়িত্ব পালন করার পর বিদ্যালয়টির প্রভূত উন্নতি সাধন করে।  ১৯৯০ সালের জানুয়ারি মাসে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা মিসেস ইসমাত বানুকে  দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে সুস্হ অবস্হায়ই অবসর গ্রহণ করেন।
মিসেস ইসমাত বানু ১৯৯০ সালের জানুয়ারি মাসে ৭ম প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন । মিসেস ইসমাত বানু দায়িত্ব গ্রহণের পর তার সুযোগ্য নেতৃত্ব, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং অভিভাবক মহলের সহযোগিতায় ছাত্রী বৃদ্ধির ফলে নির্মিত ১ম তলা ভবনটি ২য় এবং ৩য় তলা বিদ্যালয়ের নিজস্ব টাকায় নির্মাণ করা হয়। ছাত্রী বৃদ্ধির ফলে ১৯৯২ সাল হতে দুটি শিফট চালূ করা হয়। প্রভাতি শাখায় শিশু শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণী (মানবিক) পর্যন্ত এবং দিবা শাখায় ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণী (মানবিক, বাণিজ্য, বিজ্ঞান) পর্যন্ত চালু করা হয়। ১নং এ, সি, রায় রোডস্থ পুরাতন ভবনে শিশু থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত চালু থাকে।
বিদ্যালয়ের নিজস্ব ভবন সম্পূর্ণরুপে প্রস্তুত হয়ে যাওয়ায় এবং পুরাতন  ভবনে শ্রেণী কার্যক্রম চালনো ঝুকিপূর্ণ হওয়ায় ২০০৩ সনে ১ নং এ, সি, রায় রোডে চলতে থাকা শিশু থেকে ৫ম শ্রেণীর কার্যক্রম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ঢাকার অনুমতি ক্রমে ১৭/১৮ কাজিমুদ্দিন সিদ্দিকি লেনস্থ বিদ্যালয়ের নিজস্ব ভবনে স্থানান্তর করা হয়। ছাত্রী সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকায় ২০০৫ সনে নিজস্ব অর্থায়নে বিদ্যালয়ের পশ্চিম পার্শস্থ তিন তলা ভবনটি নির্মাণ করা হয়।
জনাব ইসমাত বানু ০১-১০-২০০৭ ইং পর্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে বিদ্যালয়টি পরিচালনা করে অবসর গ্রহণ করেন। তার আমলে বিদ্যালয়টি উত্তোরোত্তর সমৃদ্ধিও পথে এগিয়ে চলে, কিন্তু অবসর গ্রহণের সময় সুযোগ্য উত্তরসুরি নির্বাচন করতে না পারায় বিদ্যালয় পরিচালনায় অস্থিরতা নেমে আসে। একজনের পর একজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আসতে থাকে। এ ধারাবাহিকতার জনাব ইসমাত বানুর পর বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক জনাব মো: রফিকুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু তিনি মাত্র এক মাসের ব্যবধানে ০১-১১-২০০৭ ইং তারিখ পদত্যাগ করেন এবং সিনিয়র শিক্ষক জনাব আজিজুননেসাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব ভার অর্পণ করা হয়।
বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদেও এই অসতর্ক সিদ্ধান্ত শিক্ষক কর্মচারিরা মেনে নিতে পারেনি। ফলে তারা জনাব আজিজুননেসার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমে পড়ে। ফলশ্রুতিতে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ১০-৪-২০০৯ ইং তারিখে জনাব আজিজুননেসাকে দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দিয়ে বাধ্যতামূলোক ছুটিতে পাঠিয়ে সিনিয়র শিক্ষক জনাব পারভীন বানুকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে নিয়োজিত করেন। জনাব পারভীন বানু একজন স্থায়ী প্রধান শিক্ষকের নিয়োগের নিমিত্তে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেন এবং বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে জনাব মাহফুজা বেগমকে প্রধন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগদান করেন। জনাব মাহফুজা বেগম ৬-০৫-০৯ ইং তারিখ প্রধান শিক্ষক হিসাবে আনন্দময়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। ইতিমধ্যে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি পরিবর্তন হয়। জনাব হাফিজউদ্দিন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং কিছুদিনের মধ্যেই জনাব মাহফুজা বেগমকে অন্যায় ও বে-আইনীভাবে অপসারণ করে। ১৭-১০-০৯ তারিখে সিনিয়র শিক্ষক জনাব আবু তাহের মিয়াকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দান করেন।
সভাপতি জনাব হাফিজুদ্দিনের পরামর্শে জনাব আবু তাহের মিয়া বিদ্যালয়ের একজন স্থায়ী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জন্য সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেন। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সম্ভাব্য প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দানে উভয় পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে একটি প্যানেল তৈরি করা হয়। অজানা কোন কারণে জনাব হাফিজ উদ্দিন অষ্টম স্থান অধিকারী এবং শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে ইতিপূর্বে বাধ্যতামুলোক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া সিনিয়র শিক্ষিকা জনাব আজিজুননেসাকেই পুনরায় স্থায়ী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দান করেন। জনাব আজিজুননেসা ১৪-২-১০ ইং তারিখে আবারও প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব বুঝে নেন এবং পুনরায় সরিয়ে দেওয়ার পূর্ব পর্যন্ত অর্থাৎ ১০-৭-১৩ পর্যন্ত কর্মরত থাকেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, ঢাকা জনাব মাহফুজা বেগমের অপসারণ এবং জনাব আজিজুননেসার নিয়োগ প্রক্রিয়াকে বৈধ বলে মনে করেননি। ফলে প্রায় চার বৎসর চেষ্টা করেও জনাব আজিজুননেসা বাংলাদেশ শিক্ষা অধিদপ্তরের কাছ থেকে প্রধান শিক্ষক হিসাবে নিবন্ধিত হতে পারেননি। অবশেষে অবসর বয়সের ২ মাস ১ দিন পূবের্ ২০১৩ সনের জানুয়রি মাসে তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কাছ থেকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে এমপি.ও ভূক্ত হন।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকের চাকুরীর বয়স সীমা ৬০ বৎসর হলে তাকে আর ঐ পদে রাখা যায় না। কিন্তু সভাপতি হাফিজুদ্দিন সাহেব সেই নিয়মটি ও ভঙ্গ করে তার চাকরির মেয়াদ দুই বৎসর বারিয়ে দেন।
তার এই বেআইনি কাজটির বিরুদ্ধে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডেও কড়া চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে অবশেষে বিগত ১০-৭-১৩ ইং তারিখে জনাব আজিজুননেসাকে সরিয়ে পুনরায় তার-ই দ্বারায় ইতিপূর্বে উচ্ছেদকৃত প্রধান শিক্ষক জনাব মাহফুজা বেগমকে যোগ্য, উপযুক্ত ও বৈধ হিসাবে স্বীকার করে নিয়ে প্রধান শিক্ষকের পদে পুনর্বহাল করেন।
বর্তমান প্রধান শিক্ষক জনাব মাহফুজা বেগম ৮-৭-১৩ ইং সনে পুনর্বহাল হয়ে যোগ্যতা ও দক্ষতার সাথে বিদ্যালয়টি পরিচালনা করে আসছেন। বর্তমানে স্কুলে ৬৭ জন শিক্ষক ৩ জন অফিস সহকারী ও ১০ জন ৪র্থ শ্রেণীর কর্মকর্তা কর্মরত আছেন। উল্লেখ করা যেতে পারে যে ২০১১ সনে বিদ্যালয়ের প্রভাতী শাখায় ও বিজ্ঞান বিভাগ চালু করা হয়। এরই মধ্যে বিদ্যালয়টির বাহ্যিক কলেবর বৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ফ্যাসিলিটিজ বিভাগ ইতিমধ্যে তাদের পূর্বের নির্মাণকৃত তিন তলা দালানের উপর আরও দুই তলা নির্মাণ করে দিয়েছেন। ফলে বর্তমানে বিদ্যালয়টি তিনটি ভবন (দক্ষিণের ৩ তলা, পশ্চিমের ৩ তলা এবং উত্তরের ৫তলা) নিয়ে প্রতিষ্ঠিত। বিদ্যালয়ে ১টি পাঠাগার, ১টি গবেষণাগার, ১টি নামায ঘর এবং ২০টি কম্পিউটারসহ একটি মাল্টিমিডিয়া কনফারেন্স রুম আছে।
প্রসঙ্গক্রমে চলে আসছে যে বিভিন্ন অনিয়ম ও বেআইনী কার্যকলাপের কারণে মাইশি কর্তৃক গঠিত তদন্ত টিম সভাপতি জনাব হাফিজ সাহেবের নেতৃত্বাধীন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিকে অবৈধ এবং জনাব মাহফুজা বেগমকে বৈধ প্রধান শিক্ষক হিসাবে প্রতিবেদন পেশ করেন। প্রতিবেদনের ফলশ্রুতিতে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড উক্ত কমিটি ভেঙে দিয়ে এডহক কমিটি গঠন করেন। তদন্ত প্রতিবেদনের সাপেক্ষে বর্তমান প্রধান শিক্ষক জনাব মাহফুজা বেগম এম. পি. ও ভুক্ত হন। বর্তমানে বিদ্যালয়টি বোর্ড কর্তৃক গঠিত এডহক কমিটির তত্ত্বাবধানে (সভাপতি জনাব মাসুদা বেগম, উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, ঢাকা শিক্ষ বোর্ড) একটি নির্বাচিত বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি গঠনের লক্ষে এগিয়ে চলছে। আগামী ৩ এপ্রিল নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। আশা করি যথা সময়ে নির্বাচন হবে। এখানে উল্লেখ করা অত্যন্ত সমিচিন হবে যে বর্তমান এডহক কমিটির সভাপতি জনাব মাসুদা বেগমের অক্লান্ত পরিশ্রম ও সুযোগ্য নেতৃত্বে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনাব মাহফুজা বেগম এবং শিক্ষক প্রতিনিধি জনাব সা’দ আহমেদেও নিরলস চেষ্টায় একটি বিদ্যালয় বার্ষিকী বের হতে যাচ্ছে। আশা তাদের সব প্রচেষ্টা সফল হবে এবং বিদ্যালয়টি সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে।
বর্তমানে প্রধান শিক্ষক জনাব মাহফুজা বেগমের আন্তরিক প্রচেষ্টা ও নিরলস পরিশ্রমের ফলে বিদ্যালয়টি ধারাবাহিকভাবে উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০১৪ সনে ছাত্রী সংখ্যা ২৫০ জন বৃদ্ধি পেয়ে ২২৫০ এ উন্নীত হয়েছে। সম্প্রতি ঘোষিত ২০১৩ সনের এস. এস. সি পরীক্ষার বিদ্যালয়ের ছাত্রী খাদিজা খাতুন মানবিক বিভাগ থেকে ঢাকা বোর্ডে ১৬তম স্থান অধিকার করে মেধা তালিকায় বৃত্তি পেয়েছে।
বর্তমানে বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার পরিবেশ খুবই সুন্দর, নিয়ম-শৃঙ্খলা যথেষ্ট প্রশংসনীয়। পি.ই.সি, জে.এস.সি এবং এস.এস. সি পরীক্ষর ফলাফলও অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আশা রাখি বিদ্যালয়টি অভূতপূর্ব সাফল্যেও শিখরে আরোহণ করবে।